somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবনিক-দ্বিতীয় খন্ড~ শেষ পর্ব

১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
সেরিমেতোভা এয়ারপোর্ট থেকে এরোফ্লোতের মাঝারি মাপের বিমানটা কিছুক্ষণ আগে উড্ডয়ন করেছে। সৌম্য সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থায় সামনে ঝুঁকে ঘাড় উঁচিয়ে শেষবারের মত মস্কো শহরটাকে দেখার চেষ্টা করছে। সন্ধ্যে নামছে সবে-বরফের চাদরে মোড়া বিশাল এই শহরটাকে খানিকটা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে-ভুতুড়ে মনে হচ্ছে। প্রথম দিন বিমান ল্যান্ড করার পুর্ব মুহুর্তে এই শহরের এমন নিষ্প্রাণ , ঘোলাটে, প্রায় নিশ্চল প্রায় ঘোলাটে শহরটাকে দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিল-তার বার বার মনে হচ্ছিল এটা সেই শহর নয় যেখানে তাঁর আসবার কথা। বিমানটা হয়তো ভুল করে সাইবেরিয়াতে বা অন্য কোন শহরে চলে গেছে। যে শহরের স্ট্রিট বাতিগুলো মোমবাতির মত টিম টিম করে জ্বলছে রাস্তায় বরফে মোড়া দুয়েকটা কিম্ভুত আকৃতির গাড়ি অতি মন্থর গতিতে চলছে। সমগ্র শহড় জুড়ে একটুখানি সবুজের রেশ নেই। এয়ারপোর্টের বরফগুলো বিমানের চাকায় পিষ্ট হয়ে আর কাদা মাটিতে ধুসর রঙ ধারণ করে পুরো পরিবেশটাকে আরো বেশী ভৌতিক করে রেখেছে।
সেদিন সৌম্য কোনমতেই এ শহরে নামতে চায়নি- মনে প্রাণে ফিরে যেতে চাইছিল তাঁর আপন আলয়ে।বার বার চোখ বন্ধ করে নিজেকে চিমটি কেটে ভাবতে চাইছিল এটা সত্যি নয় দুঃস্বপ্ন।
এয়ারপোর্টে নেমে বাইরের মাইনাস পঁচিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হালকা ঝড়ো হাওয়ার বাতাসের ঝাপটায় সত্যিকারে হাড়-কাঁপুনি শীত অনুভব করছিল। এয়ারপোর্টে ওকে যে এজেন্ট রিসিভ করতে এসেছিল তাঁর হাত-পা ধরে মিনতি করেছিল আমাকে ফিরতি ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেন আমি এই দেশে আর এক দণ্ড থাকব না।
সেদিন কি ঘুণাক্ষরেও জানত সে বাইরে থেকে দেখা ধুসর এই শহরের ভিতরে এত রঙ, উচ্ছ্বাস উচ্ছলতা লুকিয়ে আছে!
আজ এই শহরটার জন্য বড্ড মন কাঁদছে-কোন মতেই ফিরে যেতে চায়নি সে।মাত্র দু’বছরে এই দেশটা যেন জনম জনমের আত্মিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে।
খবর এসেছে সৌম্যের মা ভীষণ অসুস্থ- তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করে সৌম্য আগ-পিছু না ভেবে প্রায় এক কাপড়েই বেশী পয়সা দিয়ে টিকেট কেটে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মার বাবা সীতাকুণ্ডের বেশ কেউকেটা ধনবান মানুষ। ভাটিয়ারীর প্রথমদিককার জাহাজ-ভাঙ্গা ব্যবসায়ীর তিনি একজন। এছাড়া খাতুন-গঞ্জেও তাঁর পাইকারি মালের বেশ কয়েক খান আড়ত আছে।
আমরা দুই ভাই এক বোন। ভাইবোনের সবার ছোট আমি। আমার বাবার ইচ্ছে ছিলনা আমরা ভাইয়েরা জাহাজ-ভাঙ্গা ব্যাবহার সাথে যুক্ত হই। তিনি চেয়েছিলেন আমরা দু ভাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্য কোন ভদ্রস্ত ব্যবসায় যুক্ত হই। কিন্তু আমার বড় ভাই পড়াশুনায় বেশী এগুতে না পেরে অবশেষে বাবার পুরনো ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে।
শেষমেষ মা-বাবার শেষ ভরসা ছিলাম আমি। জন্ম থেকেই দেখে এসেছি অফুরন্ত টাকার ঝনঝনানি। আমার কোন কিছুর অভাবই কখনো অপূর্ণ থাকেনি।তবে পড়াশুনায় ফাঁকিবাজি করলেও বেশ মেধাবী ছাত্র নাকি আমি। প্রথম শ্রেণীতে ইন্টার পাশ করার পরে আমার বাবার খায়েশ হল আমাকে বিদেশে পড়াতে পাঠাবে। আমিও বেশ লাফালাম। কিন্তু স্কলারশিপ বা ভাল ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য টোফেল বা জি ম্যাট করার মত ধৈর্য-ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না।
আমার তখন ধান্ধা যেন তেনভাবে পয়সা দিয়ে কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে দেশ ত্যাগ করা। তবে ইউরোপ আমেরিকায় না হলে ইজ্জত থাকে না তাই ওসব দেশে যাবার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করলাম।
সব চেষ্টায় বিফল হয়ে যখন চরম হতাশায় আমি ঠিক তখন আমার এক বন্ধু রাশিয়ার খবর দিল। সব শুনে পারলে তক্ষুনি আমি রাশিয়ায় ছুটে যাই।
কিন্তু বাধ সাধলেন আমার বাবা। কম্যুনিস্টদের দেশে বিশেষ করে একেবারেই অপরিচিত কোন পরিবেশে তিনি আমাকে যেতে দিবেন না। আমার মাকে কে যেন কান পড়া দিয়েছিল ওদেশে গেলে আমি নাকি নাস্তিক হয়ে যাব! আমার বড় ভাই ও রাজী নয়। সে এদিক ওদিক থেকে খবর এনে বুঝে গেছে আদপে আমার উদ্দেশ্য কি!
প্রথমে আমি একা লড়াই চালালাম পরে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বড় আপাকে সঙ্গী করলাম। আমার বাবা আবার ভীষণ মেয়ে অন্তঃপ্রান। তাঁর কথা ফেলতে পারেন না। অবশেষে আমার জেদ আর বড় আপার চেষ্টায় সবাই নিম রাজী হোল।
পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে মস্কোতে এসেছিলাম। দু’বছরে বহু চেষ্টায় তাঁর অর্ধেকেও খরচ করতে পারিনি। ভুঁইফোড় একটা ইনিস্টিটিউট থেকে টাকার বিনিময়ে দুইবার ভিসা এক্সটেন্ড করিয়েছি।
ফেরার পথে পকেটে আমার এখনো হাজার তিনেক ডলার। আহা-হা এই টাকা দিয়ে আরো বছর দু’য়েক আয়েশ আর ফুর্তিতে কাটিয়ে দিতে পারতাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সৌম্যের হুট করে রাশিয়া ছেড়ে যাবার জন্য চরম মন খারাপ হলেও- মায়ের জন্য ভীষণ উৎকণ্ঠা হচ্ছে। মা তাকে ও সে তাঁর মাকে প্রচণ্ড ভালবাসে। এখানে আসার পরে বার বার উপলব্ধি করেছে মায়ের অভাব।
তবে চোখমুখে দারুণ এক প্রশান্তি তার। ফেরার আগে সম্ভবত মহৎ এক কর্ম করে এসেছে সে আনন্দে।এয়ারপোর্টে ববি তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল বেশ কিছুক্ষণ- মনে হচ্ছিল মায়ের পেটের ভাইকে চির বিদায় দিচ্ছে। রণি ভাই ও বেশ বিষণ্ণ বা মন খারাপের ভান করছে। তবে আমি জানি, আমি যতদিন উক্রাইন বা রাশিয়ায় থাকব ততদিন তাঁর মাথায় অনবরত অমঙ্গলের কাঁটা খোঁচাবে। মস্কোর আরো কিছু বন্ধু এসেছিল- প্রায় সবাই মাতাল। প্রত্যেকের চেহারায় সত্যিকারের বেদনার আভাস। এর আগে সম্ভবত কোন বন্ধুকে কেউ মস্কো থেকে দেশে বিদায় দেয় নি।
ববি আর এলিনার সাক্ষাৎ টা আমিই নিজে যেচে করিয়েছিলাম খুব আগ্রহভরে। রনী ভাই ববির জন্য যে রকম পাত্রী খুঁজছেন এলিনা অনেকটা সেই টাইপের। আর এলিনা কোন বাঙ্গালী ছেলেকে বিয়ে করতে চাইলে ববি পারফেক্ট। আমার ধারনা ও ববিকে মানুষ করতে পারবে। এলিনা ববির সাথে প্রথমে হাই হ্যালো করেছিল শুধু কিন্তু একেবারেই পাত্তা দেয়নি। ববির মত একজন সুদর্শন বাকপটু বাবনিকের বেশ আঁতে লেগেছিল। সে যেন কঠিন পণ করেছিল যে ভাবেই হোক এলিনাকে পটাবেই।
ওদিকে ওর প্রতি এলিনার নিস্পৃহভাব আর আমাকে ফিরে পাবার আকুতি ববিকে যেন উন্মাদ করে ফেলল।
আমার ভীষণ অবহেলা আর ববির চরম একাগ্রতায় অবশেষে বরফ কিছুটা গলেছে।
বন্ধুর জন্য এমন একটা কিছু করতে পারায় আমি চরম প্রীত আনন্দিত ও গর্বিত। তবে ফেরার আগে ববিকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছি, ‘এ মেয়েকে সে বিয়ে করবে’

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
~ প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২৪
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×